তিন দিনে পেটের মেদ কমানোর উপায় ব্যায়াম
সূচি পত্রঃ তিন দিনে পেটের মেদ কমানোর উপায় ব্যায়াম
- তিন দিনে পেটের মেদ কমানোর উপায় ব্যায়াম
- এক গ্লাস পানির সাথে হোক দিনের শুরু
- পেটের মেদ কেন হয়
- কি খেলে তারাতারি মেদ কমে যায়
- কি কি ব্যায়াম করলে তারাতারি মেদ কমে
- পর্যাপ্ত ঘুম যেন হয় তা নিশ্চিত করুন
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- প্রোটিন সমৃদ্ধ নাস্তা করুন
- পেটে মেদ কমাবে যে ৭ টি অভ্যাস
- শেষ কথাঃ তিন দিনে পেটের মেদ কমানোর উপায় ব্যায়াম
তিন দিনে পেটের মেদ কমানোর উপায় ব্যায়াম
তিন দিনে পেটের মেদ কমানো সম্ভব নয়, কারণ শরীরের মেদ কমানোর জন্য সময় এবং ধৈর্য্যের প্রয়োজন হয়। তবে, আপনি যদি তিন দিনে পেটের মেদ কমানোর দিকে কিছু পদক্ষেপ নিতে চান, তাহলে কিছু ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনুসরণ করতে পারেন যা দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ হবে।প্ল্যাঙ্ক এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর ব্যায়াম যা আপনার পুরো শরীরের পেশীকে টানতে সাহায্য করে, বিশেষ করে পেটের মেদ কমাতে সহায়ক।পেট এবং পিঠ সোজা রেখে, কনুই এবং পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে শারীরিক অবস্থানে থাকুন।চেষ্টা করুন ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট অবস্থানে থাকতে।
সিটআপ পেটের মাংসপেশীকে শক্তিশালী করতে সিটআপ খুব কার্যকর। পিঠ সোজা রেখে পা দুটো বাঁকিয়ে মাটিতে রাখুন, তারপর আপনার শরীর উপরে তুলুন এবং নিচে নামান।৩ সেট ১৫-২০ বার করুন।ক্রাঞ্চেস এটি পেটের ওপরের অংশের মাংসপেশীকে লক্ষ্য করে।পিঠে শুয়ে পা দুটি ভাঁজ করুন, হাত মাথার পেছনে রাখুন এবং কাঁধের অংশ দিয়ে শরীর উপরে তুলুন।৩ সেট ১৫-২০ বার করুন।
লেগ রেইজ পেটের নিচের অংশের মেদ কমানোর জন্য এটি খুব ভালো ব্যায়াম।পিঠে শুয়ে পা দুটি সোজা রাখুন এবং পা দুটি একসঙ্গে উপরে তুলুন।বাইসাইকেল ক্রাঞ্চ এটি পেটের পেশী ও সাইডের মেদ কমাতে সাহায্য করে।পিঠে শুয়ে পা দুটি তুলে, হাঁটু এবং কনুই একটি দিক থেকে অন্যদিকে আনতে হবে যেন সাইকেল চালানোর মতো দেখায়।
এক গ্লাস পানির সাথে হোক দিনের শুরু
এক গ্লাস পানি দিয়ে দিনের শুরু করা খুবই উপকারী। এটি আপনার শরীরের জন্য অনেক ভালো ফল নিয়ে আসতে পারে। এখানে কিছু উপকারিতা।ডিটক্সিফিকেশন রাতে ঘুমানোর সময় শরীর অনেকটা ডিহাইড্রেটেড থাকে। এক গ্লাস পানি পান করলে শরীরের টক্সিনগুলো বের হতে সাহায্য করে এবং শরীরকে পুনরায় হাইড্রেটেড করে তোলে।
পেট পরিষ্কার রাখে সকালে এক গ্লাস পানি খেলে পাচনতন্ত্র সক্রিয় হয় এবং পেট পরিষ্কার থাকতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সাহায্য করতে পারে।মেটাবলিজম বাড়ায় সকালে পানি পান করার ফলে মেটাবলিজম উন্নত হয়, যা শরীরের ক্যালোরি ও চর্বি পোড়াতে সহায়ক। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
ত্বকের স্বাস্থ্য পর্যাপ্ত পানি পানে ত্বক হাইড্রেটেড থাকে, যা ত্বকের কোষের পুনর্নবীকরণে সাহায্য করে এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখে।স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পানি পান করলে মস্তিষ্ক সজাগ থাকে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পায়, কারণ পানি মস্তিষ্কে পুষ্টি পৌঁছানোর কাজ করে।কিভাবে পানি পান করবেন সকালে গরম পানি পান করলে পাচনতন্ত্র ভালোভাবে কাজ করে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়।আপনি চাইলে এক গ্লাস গরম পানিতে অল্প লেবু বা মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন, যা শরীরকে আরো শক্তিশালী এবং ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করবে।
পেটের মেদ কেন হয়
পেটের মেদ জমার বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা একসঙ্গে বা আলাদাভাবে কাজ করতে পারে। সাধারণত অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, এবং জেনেটিক ফ্যাক্টর এসবের মধ্যে অন্যতম। নিচে পেটের মেদ হওয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো।অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ খাবারের মাধ্যমে আপনার শরীরে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি হলে তা শক্তিতে পরিণত হওয়ার বদলে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট হিসেবে জমে থাকে। পেটের চারপাশে বিশেষ করে এই অতিরিক্ত ফ্যাট জমা হতে পারে।
অকার্যকর জীবনযাপন শারীরিকভাবে সক্রিয় না থাকার কারণে শরীরের মেটাবলিজম (বিক্রিয়ার হার) ধীর হয়ে যায়, যার ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়ানো সম্ভব হয় না। এটি মেদের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষত পেটের মেদখাবারে অতিরিক্ত চিনি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার উচ্চ পরিমাণে চিনি, ফাস্ট ফুড, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে অতিরিক্ত ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, যা মেদ জমানোর কারণ হতে পারে। এটি বিশেষত পেটের অঞ্চলে ফ্যাটের স্তর বাড়ায়।
মানসিক চাপ স্ট্রেসের কারণে শরীরে কোর্টিসল নামক একটি হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই হরমোনটি পেটের চারপাশে মেদ জমাতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত চাপ পেটের মেদ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে।ঘুমের অভাব পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের মেটাবলিজম নষ্ট হয়ে যায় এবং ক্যালোরি পোড়াতে শরীর কম কার্যকরী হয়ে পড়ে। এটি পেটের মেদ বাড়ানোর একটি বড় কারণ হতে পারে।
হরমোনাল পরিবর্তন বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে মেনোপজ বা গর্ভধারণের পর হরমোনের পরিবর্তন ঘটতে পারে, যা পেটের মেদ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও বয়সের সঙ্গে হরমোনের পরিবর্তন ঘটতে থাকে, যা পেটের মেদ বাড়াতে প্রভাবিত করে।জেনেটিক ফ্যাক্টর আপনার পরিবারের সদস্যদের যদি পেটের মেদ জমার প্রবণতা থাকে, তবে আপনারও তা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জেনেটিক কারণে আপনার শরীর কোথায় ফ্যাট জমাবে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
অ্যালকোহল ও ধূমপান অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান বা ধূমপানও পেটের মেদ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। অ্যালকোহলে অতিরিক্ত ক্যালোরি থাকে এবং এটি শরীরের পেটের আশেপাশে ফ্যাট জমাতে সহায়তা করে।বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের মেটাবলিজম ধীরে ধীরে কমে যায়। ফলে খাবার থেকে অতিরিক্ত ক্যালোরি সহজে ফ্যাটে পরিণত হয়ে শরীরে জমে যায়, বিশেষ করে পেটের অঞ্চলে।
কি খেলে তারাতারি মেদ কমে যায়
মেদ কমানোর জন্য কোনও একক খাবার নেই যা একদিনেই আপনাকে দ্রুত ফল দিবে, তবে কিছু
খাবার ও ডায়েট পরিকল্পনা রয়েছে যা দ্রুত মেদ কমাতে সাহায্য করতে পারে যদি সেগুলো
নিয়মিত খাওয়া হয় এবং সাথে সাথে ব্যায়াম করা হয়। স্বাস্থ্যকর খাবার, যা পেটের মেদ
কমাতে সাহায্য করতে পারে, সেগুলি হলো
প্রোটিন শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পেশী গঠনে সাহায্য করে এবং আপনার মেটাবলিজমকে ত্বরান্বিত করে। প্রোটিনের উচ্চ খাবার খাওয়ার ফলে খিদে কম লাগে, যা ক্যালোরি গ্রহণ কমাতে সাহায্য করে।মুরগির মাংস, ডিম, দই, মাছ, টোফু, এবং বীট মটরশুটি।ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ফাইবারে ভরা খাবার পেট ভরা রাখে, ফলে খাবারের পরিমাণ কম হয় এবং হজম সুষ্ঠু থাকে। ফাইবার পেটের মেদ কমাতে সহায়ক।শাকসবজি বিশেষ করে শাক, ফল, ওটস, বাদাম, স্যাঁজা শস্য।
স্বাস্থ্যকর চর্বি স্বাস্থ্যকর চর্বি আপনার শরীরের জন্য দরকারি, এবং এগুলো শরীরের খারাপ চর্বি কমাতে সাহায্য করে।অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, মাছ বিশেষত স্যালমন, এবং বাদাম।সবুজ শাকসবজি সবুজ শাকসবজি কম ক্যালোরি এবং উচ্চ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এগুলি ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ, যা মেদ কমাতে সহায়ক।পালংশাক, লেটুস, কালে, ব্রকলি, কপি।
গ্রিন টি গ্রিন টি এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ক্যাটেচিন নামক উপাদান থাকে যা মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এবং মেদ পোড়াতে সহায়ক। দিনে ১-২ কাপ গ্রিন টি পানে পেটের মেদ কমানো সম্ভব।মিষ্টি আলু মিষ্টি আলু কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সম্পন্ন এবং প্রাকৃতিকভাবে ফাইবার সমৃদ্ধ, যা আপনাকে দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
দইতে প্রোবায়োটিকস থাকে, যা আপনার পাচনতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং মেদ কমানোর প্রক্রিয়ায় সহায়ক। তবে অতি মিষ্টি বা সুগার যুক্ত দই থেকে বিরত থাকতে হবে।চিয়া সিডে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এটি পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং দ্রুত মেদ কমাতে সহায়ক।
জিরা পানি বা জিরার নির্যাস পেটের মেটাবলিজম ত্বরান্বিত করে, হজমে সাহায্য করে এবং বেল্লি ফ্যাট কমাতে সহায়ক। এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ জিরা গরম পানি দিয়ে, তার পরে এটি পান করা যেতে পারে।এক চামচ আপেলের ভিনেগার গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি আপনার অ্যাপেটাইট কমাতে সাহায্য করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়, ফলে মেদ কমাতে সহায়ক।
কি কি ব্যায়াম করলে তারাতারি মেদ কমে
মেদ দ্রুত কমাতে হলে একমাত্র খাদ্য নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং সঠিক ব্যায়ামও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম রয়েছে যা বিশেষভাবে দ্রুত মেদ কমাতে সহায়ক। তবে মনে রাখবেন, প্রতিটি শরীরের জন্য ফলাফল আলাদা হতে পারে, এবং সবার জন্য ফলপ্রসূ হতে সময় লাগতে পারে। এমন কিছু ব্যায়াম রয়েছে যা মেটাবলিজম বাড়িয়ে এবং মেদ পোড়াতে সাহায্য করে।
- কার্ডিও এক ধরনের শারীরিক কার্যক্রম যা দ্রুত মেদ পোড়াতে সহায়ক। এগুলি আপনার হার্ট রেট বৃদ্ধি করে এবং শরীরের ক্যালোরি দ্রুত পোড়াতে সাহায্য করে।দিনে অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন বা দৌড়ান।সপ্তাহে ৪-৫ দিন ২০-৩০ মিনিটের জন্য হালকা বা মাঝারি জগিং করুন।বাইসাইকেল চালানো বা স্পিন ক্লাসে অংশ নেওয়া।পাহাড় বা পাহাড়ি এলাকায় হাঁটা।
- হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং এক ধরনের ব্যায়াম যেখানে কম সময়ের মধ্যে উচ্চ তীব্রতায় শরীরের শক্তি খরচ করা হয়। এটি মেটাবলিজমকে ত্বরান্বিত করে এবং দ্রুত মেদ কমাতে সাহায্য করে।৩০ সেকেন্ড রেকর্ড স্পিডে দৌড়ানো, তারপর ৩০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় চালিয়ে যাওয়া।২০ সেকেন্ড পুশ-আপস এবং স্কোয়াটস করুন, ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিন এবং পুনরায় করুন।
- প্ল্যাঙ্ক পেটের মাংসপেশীকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে এবং পেটের মেদ কমানোর জন্য দারুণ একটি ব্যায়াম। এটি পুরো শরীরকে টোন করে, বিশেষ করে পেটের অংশকে।পেট এবং পিঠ সোজা রেখে কনুই এবং পায়ের আঙুল দিয়ে দেহকে সোজা রাখুন। ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ধরে অবস্থান করুন এবং ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।
- স্কোয়াট পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে এবং পা ও কোমরের পেশী শক্তিশালী করে। এটি একটি কার্যকরী ব্যায়াম যা শরীরের নিচের অংশকে টোন করে।পা মাটিতে সোজা রেখে হাঁটু বাঁকান এবং শরীর নিচে নামান যেন আপনি বসে যাচ্ছেন। তারপর আবার দাঁড়িয়ে আসুন।
- ক্রাঞ্চ পেটের মাংসপেশীকে লক্ষ্য করে কাজ করে এবং বিশেষভাবে পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। এটি একটি সাধারণ এবং কার্যকর ব্যায়াম।পিঠে শুয়ে পা ভাঁজ করুন এবং হাতে মাথার পেছনে রাখুন, তারপর কাঁধের অংশ দিয়ে শরীর উপরে তুলুন।
- লেগ রেইজ পেটের নিচের অংশের মেদ কমাতে খুব কার্যকর। এটি পেটের নিচের অংশের পেশীকে টোন করে এবং শক্তিশালী করে।পিঠে শুয়ে পা দুটি সোজা রাখুন এবং পা দুটি একসঙ্গে উপরে তুলুন। তারপর নিচে নামান।
- বাইসাইকেল ক্রাঞ্চ পেটের মেদ কমানোর জন্য খুব ভালো ব্যায়াম, বিশেষত সাইডের মেদ কমাতে সহায়ক। পিঠে শুয়ে পা দুটি তুলে, হাঁটু এবং কনুই একটি দিক থেকে অন্যদিকে আনতে হবে যেন সাইকেল চালানোর মতো দেখায়।
- মাউন্টেন ক্লাইম্বার এক ধরনের কার্ডিও ব্যায়াম যা দ্রুত ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে এবং পেটের মেদ কমাতে সহায়ক।প্ল্যাঙ্ক পজিশনে থাকুন এবং একে একে পা দুটি বুকের দিকে টানুন, যেন আপনি পাহাড়ে উঠছেন।
- বার্পি একটি হাই-ইন্টেনসিটি ব্যায়াম যা শরীরের পুরো অংশকে কাজ করায় এবং দ্রুত ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে।প্রথমে দাঁড়িয়ে থাকুন, তারপর স্কোয়াট পোজিশনে নেমে পা পিছনে ফেলুন এবং পুশ-আপ করুন। পরে আবার উঠে দাঁড়িয়ে লাফ দিন।
পর্যাপ্ত ঘুম যেন হয় তা নিশ্চিত করুন
হ্যাঁ, পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের সুস্থতা এবং মেদ কমানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের অভাব আপনার শরীরের মেটাবলিজমকে ব্যাহত করতে পারে, হরমোনাল ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, এবং খিদে নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা অতিরিক্ত খাওয়ার দিকে পরিচালিত করে। তাই নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে, আপনি পর্যাপ্ত এবং ভালো ঘুম নিচ্ছেন।
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে উঠা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে আপনার শরীরের বাইোলজিক্যাল ক্লক ঠিক থাকে, যা গভীর ঘুমে সাহায্য করে।ঘুমের স্থান শান্ত, অন্ধকার এবং ঠান্ডা হওয়া উচিত। গরম বা অস্বস্তিকর পরিবেশ ঘুমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
ঘরের আলো কমিয়ে রাখুন এবং রাতের সময় ফোন বা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার কম করুন, কারণ এটি ঘুমের মান খারাপ করতে পারে।ক্যাফেইন কফি, চা, চকলেটএবং অ্যালকোহল ঘুমের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে, তাই ঘুমানোর অন্তত ৪-৬ ঘণ্টা আগে এই পানীয়গুলো থেকে বিরত থাকুন।
ঘুমানোর আগে কিছু শিথিলকরণ ব্যায়াম (যেমন যোগব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা ধ্যান) করলে আপনি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারবেন এবং ঘুমের মান উন্নত হবে।রাতে ঘুমানোর আগে ১৫-২০ মিনিটের জন্য যোগ বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন।ভারী বা তেলযুক্ত খাবার ঘুমের মান কমাতে পারে। তাই ঘুমানোর আগে হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের স্ট্রেস কমাতে এবং ঘুম উন্নত করতে সহায়ক। তবে ঘুমানোর আগে এক ঘণ্টার মধ্যে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি উল্টো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।দিনের বেলা হালকা ব্যায়াম করুন, যেমন হাঁটা বা যোগব্যায়াম।ঘুমানোর আগে কিছু শান্তিপূর্ণ অভ্যাস গড়ে তোলুন, যেমন বই পড়া, মিউজিক শোনা বা প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা। এতে আপনার শরীর ও মন শান্ত থাকে, যা গভীর ঘুমের জন্য সহায়ক।
আপনার ঘুমের পরিবেশে কিছু নিয়মিত অভ্যাস চালু করুন যা ঘুমের গুণগত মান বৃদ্ধি করে। যেমন বিছানায় যাওয়ার আগে ফোন বা টেলিভিশন দেখা বন্ধ করা, কেবল বিশ্রাম এবং ঘুমের জন্য বিছানা ব্যবহার করা।পর্যাপ্ত ঘুম আপনার শরীরের মেটাবলিজমে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত মেদ জমা হতে বাধা দেয়।ঘুম আপনার শরীরের গরমোন যেমন গ্লুকাগন, ইনসুলিন এবং গ্রীলিন নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা খিদে ও মেদ জমা কমাতে সাহায্য করে।
র্যাপ্ত ঘুম শরীরের কোর্টিসল স্ট্রেস হরমোন স্তর কমাতে সহায়ক, যা মেদ জমার প্রধান কারণ।যদি ঘুমের সমস্যা থাকে, যেমন অল্প ঘুম বা অনিদ্রা, তবে পেশাদার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। কিছু স্লিপ ডিসঅর্ডার যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া, ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
নিয়মিত ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি মেদ কমানোর পাশাপাশি আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকেও উন্নত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়, শক্তি বাড়ে, এবং সুস্থ ও সচল শরীর বজায় থাকে।এখানে কিছু সাধারণ ব্যায়াম উপায় রয়েছে যা আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনঃ
- কার্ডিও ব্যায়ামঃকার্ডিও ব্যায়াম আপনার হার্ট এবং ফুসফুসকে শক্তিশালী করে এবং দ্রুত ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে, যা মেদ কমাতে সহায়ক। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।সহজ এবং সাশ্রয়ী, দিনে ৩০ মিনিট হাঁটুন।সপ্তাহে ৩-৪ দিন ২০-৩০ মিনিট দৌড়ান।বাইক চালানো বা স্পিন ক্লাস করা।
- হাই-ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিংঃমন একটি ব্যায়াম যা দ্রুত ক্যালোরি পোড়াতে এবং মেটাবলিজম বাড়াতে সহায়ক। এতে শরীরকে কিছু সময়ের জন্য উচ্চ তীব্রতায় কাজ করানো হয় এবং তারপর বিশ্রাম দেওয়া হয়।২০ সেকেন্ড দ্রুত দৌড়ানো, তারপর ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় দৌড়ানো।
- শক্তি প্রশিক্ষণঃশক্তি প্রশিক্ষণ পেশী তৈরি করে, যা শারীরিক শক্তি বাড়ায় এবং শরীরের মেটাবলিজম দ্রুত করে।পুশ-আপ, স্কোয়াট, লাঞ্জ, ডাম্বেল বা ব্যবহার করা।
- যোগব্যায়ামঃযোগব্যায়াম শুধুমাত্র শারীরিক শক্তির উন্নতি ঘটায় না, বরং মানসিক শান্তি ও স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, যা মেদ কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।সূর্য নমস্কার, প্ল্যাঙ্ক পোজ, ট্রায়াঙ্গল পোজ।
- প্ল্যাঙ্কঃপ্ল্যাঙ্ক পেটের মাংসপেশীকে শক্তিশালী করে এবং শরীরের পুরো অংশকে টোন করে। এটি একটি সহজ কিন্তু কার্যকরী ব্যায়াম।পেট ও পিঠ সোজা রেখে কনুই এবং পায়ের আঙুল দিয়ে দেহকে সোজা রাখুন। ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করুন।
- ক্রাঞ্চঃক্রাঞ্চ পেটের মাংসপেশীকে লক্ষ্য করে কাজ করে এবং বিশেষভাবে পেটের মেদ কমাতে সহায়ক।পিঠে শুয়ে পা ভাঁজ করুন এবং হাতগুলো মাথার পেছনে রাখুন, তারপর কাঁধের অংশ দিয়ে শরীর উপরে তুলুন।
- স্কোয়াটঃস্কোয়াট পেট, পা এবং কোমরের পেশীকে শক্তিশালী করে। এটি একটি মুলব্যায়াম যা শরীরের নিচের অংশ টোন করতে সাহায্য করে। পা সোজা রেখে হাঁটু বাঁকান এবং শরীর নিচে নামান, তারপর আবার দাঁড়িয়ে আসুন।
- লেগ রেইজঃপেটের নিচের অংশের মেদ কমানোর জন্য এটি একটি কার্যকরী ব্যায়াম।পিঠে শুয়ে পা দুটি সোজা রাখুন এবং পা দুটি একসঙ্গে উপরে তুলুন। তারপর নিচে নামান।
- স্টেপ আপঃস্টেপ আপ পা এবং কোমরের পেশী টোন করতে সাহায্য করে, এবং এটি একটি ভালো কার্ডিওও।একটি উচ্চ প্ল্যাটফর্মে পা রেখে ওঠার চেষ্টা করুন এবং পরে ফিরে নামুন। এটি একে একে দুই পা দিয়ে করুন।
প্রোটিন সমৃদ্ধ নাস্তা করুন
প্রোটিন সমৃদ্ধ নাস্তা আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী, কারণ এটি পেশী তৈরি করতে সাহায্য করে, হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাবারের চাহিদা কমে। প্রোটিন সমৃদ্ধ নাস্তাতে সাধারণত কম ক্যালোরি এবং বেশি পুষ্টি থাকে যা আপনার শারীরিক উদ্দেশ্যকে সমর্থন করে।
- ডিমের তৈরি নাস্তাঃ২টি সেদ্ধ ডিম বা অমলেট (ডিম, পেঁয়াজ, টমেটো, শিমলা মরিচ দিয়ে। ডিম সেদ্ধ করে বা অমলেট তৈরি করে খেতে পারেন। এটি খুব ভালো প্রোটিন উৎস এবং ভিটামিন-এ, বি-১২ এবং আয়রন সরবরাহ করে।
- গ্রিক দই এবং বেরিঃএক কাপ গ্রিক দই, কিছু ব্লুবোরি বা স্ট্রবেরি, এক চামচ মধু বা বাদামগ্রিক দইয়ের মধ্যে বেরি এবং বাদাম যোগ করুন। এটি প্রোটিন, ফাইবার, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যা শরীরের জন্য উপকারী।
- বাদাম ও ফলের মিশ্রণঃ৭-১০টি বাদাম আখরোট, কাজু, মুণ্ডা, কিছু ফল আপেল, কলা বা বেরি।বাদাম এবং ফল একসাথে মিশিয়ে একটি সহজ প্রোটিন সমৃদ্ধ নাস্তা প্রস্তুত করুন। এটি আপনাকে দ্রুত শক্তি প্রদান করবে।
- সলা দই ও বাদামঃ এক কাপ দই, এক চামচ মশলা জিরা, মেথি, অথবা কাঁচা লঙ্কা, ৮-১০ টি বাদাম।দইয়ের সাথে মশলা মিশিয়ে এবং বাদাম দিয়ে পরিবেশন করুন। এটি হজমে সহায়ক এবং প্রোটিনের ভালো উৎস।
পেটে মেদ কমাবে যে ৭ টি অভ্যাস
পেটে মেদ কমাতে কিছু বিশেষ অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। এটি শুধু শরীরকে সুস্থ রাখে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী ফলাফল দিতে সহায়ক। নিচে ৭টি অভ্যাস দেওয়া হলো যা আপনার পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করবেঃ
- প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃব্যায়াম মেটাবলিজম বাড়াতে এবং ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে, যা পেটে মেদ কমানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষভাবে কার্ডিও ব্যায়াম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং এবং হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং খুব কার্যকরী। এছাড়াও শক্তি প্রশিক্ষণ যেমন স্কোয়াট, প্ল্যাঙ্ক, পুশ-আপস পেটের মাংসপেশী টোন করতে সহায়তা করে।
- স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুনঃমেদ কমানোর জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ অপরিহার্য। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, দই, মুরগির মাংস, মাছ, সবজি এবং ফল আপনার খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত। চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, এবং অতিরিক্ত ফ্যাট খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। আপনি যদি বেশি সময় ধরে একে অবহেলা করেন, তা মেদ জমার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃপানি পেটে থাকা বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। অনেক সময় পানি পান না করলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে না এবং মেদ জমতে থাকে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি আপনার শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতেও সাহায্য করবে।
- ঘুমের অভ্যাস উন্নত করুনঃপর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের হরমোনাল ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং এটি মেদ জমাতে সহায়তা করে, বিশেষত পেটে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের অভাবে শরীরে কোর্টিসল স্ট্রেস হরমোন বাড়ে, যা মেদ জমানোর কারণ হতে পারে। তাই ঘুমের মান উন্নত করার জন্য একটি সময়সূচী গড়ে তুলুন।
- স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুনঃস্ট্রেসের কারণে শরীরে কোর্টিসল হরমোন বৃদ্ধি পায়, যা পেটে মেদ জমাতে সাহায্য করে। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, এবং গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস মেনে চলা স্ট্রেস কমানোর জন্য উপকারী। এগুলি আপনার মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করবে এবং পেটের মেদ কমাতে সহায়ক হবে।
- খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুনঃঅতিরিক্ত খাওয়া মেদ জমানোর অন্যতম কারণ। সঠিক পরিমাণে খাবার খাওয়া এবং খাওয়ার প্রতি মনোযোগী হওয়া জরুরি। খাবার খাওয়ার সময় চিবিয়ে খাওয়া এবং ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া আপনার পেটের পরিমাণ বুঝতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি, বিভিন্ন ছোট খাবার ৩ বেলার পরিবর্তে ৫-৬ বার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো
- শর্করা এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে দিনঃঅতিরিক্ত শর্করা এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের খাওয়া পেটের মেদ বাড়াতে সহায়ক। পরিশোধিত শর্করা যেমন সাদা চাল, সাদা রুটি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার (যেমন চিপস, কেক, ফাস্ট ফুড কমিয়ে দিন। পরিবর্তে সম্পূর্ণ শস্য যেমন ওটস, কুইনোয়া, সবজি এবং ফল বেশি খেতে পারেন।
শেষ কথাঃ তিন দিনে পেটের মেদ কমানোর উপায় ব্যায়াম
তিন দিনে পেটের মেদ কমানোর জন্য আপনাক
জরিপ ৩৬৫ জুড়ে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন ।প্রতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়
comment url