নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন


 

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের হয়তো সবার জানা নেই,নিম পাতা অনেক কার্যকরী একটি গাছ।এই গাছের পাতা,ডাল আমাদের অনেক কাজে লাগে সাধারণত নিম গাছ গ্রাম অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। নিম গাছের উপকারিতা সম্পর্কে  আমাদের সবার জানা উচিত।

নিম গাছ অনেক উপকারী এবং পরিবেশবান্ধব একটি গাছ। নিম গাছ আমাদের অনেক কাজে লাগে, নিম গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা উচিত।নিম গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে, নিচের আর্টিকেলটি অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

পেজ সূচিপএঃনিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে হয়তো আমাদের সকলের জানা নেই নিম পাতা আমাদের অনেক উপকারে আসে চলুন জেনে নিন নিমপাতা আমাদের কি কি উপকারে লাগে এবং তার প্রতিকার কি কি তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন 
  • ত্বকের সমস্যাঃ নিম পাতার রস বা পেস্ট ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন একনি, ফুসকুড়ি, র‌্যাশ, বা পোড়া চিকিৎসায় সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃনিম পাতায় উপস্থিত কিছু উপাদান রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিসের প্রভাব কমাতে সহায়ক। 
  • অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়ালঃ নিমের পাতায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণ রয়েছে যা ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • হজমের সমস্যাঃ নিম পাতা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং পেটের সমস্যা যেমন বদহজম বা গ্যাসের সমস্যা দূর করতে উপকারী।
  • শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করাঃ নিম পাতায় উপস্থিত উপাদান শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং এটি একটি প্রাকৃতিক ডিটক্সিফাইং এজেন্ট।
নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে হয়তো আমাদের সকলের জানা আছে কিন্তু অপকারিতা সম্পর্কে জানা নেই নিম গাছের অপকারিতা কি কি  এবং তার প্রতিকার কি কি তা বিস্তারিত তুলে ধরা হলো 
  • অতিরিক্ত ব্যবহারঃ নিম পাতার অতিরিক্ত ব্যবহার হতে পারে বিষাক্ত। দীর্ঘকাল ধরে বেশি পরিমাণে খেলে বা ব্যবহারের ফলে শরীরে কিছু নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভাবস্থাঃগর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিম পাতা ব্যবহার নিরাপদ নয়, কারণ এটি গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।
  • অ্যালার্জিঃকিছু মানুষের নিম পাতার প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যার ফলে ত্বকে র‌্যাশ বা চুলকানি হতে পারে।
  • রক্তচাপ কমানোঃনিম পাতার কিছু উপাদান রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে অতিরিক্ত ব্যবহার রক্তচাপ অত্যধিক কমিয়ে ফেলতে পারে, যা বিপজ্জনক হতে পারে।
এই কারণে, নিম পাতা ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো, বিশেষ করে যদি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা বা গর্ভাবস্থা থাকে। 

নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম 

নিম পাতা খাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে, তবে মনে রাখবেন যে, এটি অতিরিক্ত না খাওয়া উচিত, কারণ এতে বিষাক্ত প্রভাব পড়তে পারে। নিম পাতা খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি এবং পরিমাণের জন্য পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিচে কিছু সাধারণ নিয়ম দেওয়া হলঃ

  • প্রথমে পরিষ্কার করুনঃনিম পাতাগুলি ভালোভাবে পরিষ্কার করুন যাতে তাতে কোনো ধুলো বা রাসায়নিক না থাকে।
  • পরিমাণঃপ্রাথমিকভাবে ২-৩টি নিম পাতা দিন এবং পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ান। সাধারণত সকালে খালি পেটে নিম পাতা খাওয়া ভালো, তবে বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।
  • খাওয়ার উপায়ঃনিম পাতা কচি বা তরতাজা হলে তা পেস্ট করে খাওয়া যেতে পারে। আপনি চাইলে পাতা গুঁড়ো করে পানির সাথে মিশিয়ে বা মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • নিম পাতা চা তৈরিঃ ৫-৬টি নিম পাতা কেটে গরম পানিতে ফেলে দিন। এরপর ৫-১০ মিনিট রাখুন এবং পরে চা হিসেবে পান করুন যদি নিম চায়ের স্বাদ তিতা লাগে, তবে একটু মধু বা লেবুর রস যোগ করতে পারেন।
  • গুঁড়ো করে খাওয়াঃকিছু মানুষ নিম পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখে এবং এক চামচ গুঁড়ো সকালে গরম পানি বা মধুর সাথে মিশিয়ে খায়। গুঁড়ো মাত্র ১/২ চামচ বা এক চামচ থেকে বেশি নয়।

 নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম 

নিম পাতার রস একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান, যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যায় উপকারী হতে পারে। তবে, এটি সঠিক পরিমাণে ও সঠিকভাবে খাওয়ার প্রয়োজন।নিচে নিম পাতার রস খাওয়ার কিছু নিয়ম দেওয়া হলোঃনিম পাতার রস প্রস্তুত করার পদ্ধতিঃপ্রথমে কিছু তাজা নিম পাতা সংগ্রহ করুন (৫-১০টি পাতা যথেষ্ট হবে)।পাতাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করুন।তারপর একটি ব্লেন্ডারে পাতাগুলি রাখুন এবং একটু পানি দিয়ে মিশিয়ে রস তৈরি করুন।রসটি ছেঁকে নিয়ে পরিস্কার একটি পাত্রে নিয়ে রাখুন।

নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে,সাধারণত ১-২ চা চামচ নিম পাতার রস খাওয়ার জন্য যথেষ্ট। আপনি রসটি সকালে খালি পেটে পান করতে পারেন।সবচেয়ে ভালো হচ্ছে সকালে খালি পেটে, কারণ এটি শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।নিম পাতার রস সরাসরি তিতা হতে পারে, তাই কিছু মানুষ মধু বা লেবুর রস মিশিয়ে খায়। আপনি চাইলে এক চা চামচ মধু বা আধা চা চামচ লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন।যদি রসটি তিতা বা খেতে কষ্টকর মনে হয়, তাহলে নিম পাতার রস গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।

সাধারণত দিনে একবার, বিশেষ করে সকালে খালি পেটে ১-২ চা চামচ নিম পাতার রস খাওয়া যথেষ্ট। অতিরিক্ত খাওয়া শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।নিম পাতার রস সাধারণত ডায়াবেটিস, পেটের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, বা ডিটক্সিফিকেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।গর্ভবতী মহিলাদের জন্য গর্ভাবস্থায় নিম পাতার রস খাওয়া পরিহার করা উচিত, কারণ এটি গর্ভপাত ঘটাতে পারে।শিশুদের জন্যও নিম পাতার রস খাওয়ানো এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি তাদের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।অতিরিক্ত নিম পাতার রস খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি রক্তচাপ কমাতে এবং অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ডিটক্সিফিকেশন এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।ত্বকের স্বাস্থ্য নিম পাতার রস ত্বকের ইনফেকশন বা র‌্যাশের চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ নিম পাতার রস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়

নিম পাতার রস খালি পেটে খাওয়ার কিছু বিশেষ উপকারিতা এবং সতর্কতা রয়েছে। এটি শরীরের নানা সমস্যায় উপকারী হতে পারে, তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে যদি অতিরিক্ত বা ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়।খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়া শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। এটি লিভারের কার্যক্রমকে উন্নত করে এবং শরীরকে পরিষ্কার রাখে।ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য, খালি পেটে নিম পাতার রস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, কারণ এটি ইনসুলিন সান্দ্রতা বাড়ানোর কাজ করে।নিম পাতার রস অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণে সমৃদ্ধ। খালি পেটে এটি ত্বকের ইনফেকশন, একনি, বা ফুসকুড়ি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়া হজমের প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে এবং গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল সমস্যা যেমন বদহজম, গ্যাস, বা পেট ফাঁপা কমাতে সহায়ক।এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, কারণ এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।গ্যাস্ট্রিক বা পেটের সমস্যা জন্য খালি পেটে যদি আপনি নিম পাতার রস খেয়ে থাকেন, তবে কিছু মানুষের জন্য এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা পেটের অ্যাসিডিটির কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যারা পেটের সংবেদনশীলতা অনুভব করেন।অতিরিক্ত নিম পাতার রস খেলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং শরীরে বিষাক্ততা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে, এটি মাথা ঘোরা, ক্লান্তি বা দুর্বলতা তৈরি করতে পারে। তাই, ১-২ চা চামচের বেশি রস খাওয়া উচিত নয়।

 চুলের যত্নে নিমপাতার উপকারিতা 

নিম পাতা চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে কারণ এতে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে। নিম পাতা চুলের বিভিন্ন সমস্যা যেমন খুশকি, চুল পড়া, ত্বকের সংক্রমণ ইত্যাদি সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে। নিম পাতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা নিচে দেওয়া হলোঃনিম পাতা খুশকির অন্যতম কার্যকরী চিকিৎসা। এর অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণ খুশকির কারণ সৃষ্টিকারী ফাঙ্গাস বা জীবাণু প্রতিরোধ করে।নিম পাতা থেকে রস বা পেস্ট তৈরি করে চুলে লাগালে খুশকি কমতে সাহায্য করে।

নিম পাতা চুলের রুটকে মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে।এটি চুলের শিকড়কে শক্তিশালী করে এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সহায়ক।নিম পাতা চুল পড়া কমাতে সহায়ক। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ চুলের গোঁড়ায় ইনফেকশন দূর করে এবং চুল পড়া রোধে সাহায্য করে।এছাড়াও, এটি মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

মাথার ত্বকের ইনফেকশন, অ্যাকনে বা ফুসকুড়ি দূর করতে নিম পাতা উপকারী। এর অ্যান্টিসেপটিক গুণ মাথার ত্বকে ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাসের আক্রমণ প্রতিরোধ করে।এটি মাথার ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং যেকোনো ধরনের সংক্রমণ বা ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে।

ত্বকের যত্নের নিম পাতা 

নিম পাতা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণে সমৃদ্ধ, যা ত্বকের নানা সমস্যা দূর করতে সহায়ক। ত্বককে সুস্থ এবং উজ্জ্বল রাখতে নিম পাতা ব্যবহৃত হয়। এটি ত্বকের জন্য অনেক উপকারী এবং নানাভাবে ব্যবহার করা যায়। নিচে ত্বকের যত্নে নিম পাতার কিছু উপকারিতা এবং ব্যবহারের পদ্ধতি দেওয়া হলোঃনিম পাতা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণে পূর্ণ, যা ত্বকের পোরে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। এটি একনি এবং ফুসকুড়ি কমাতে খুব কার্যকরী।নিয়মিত ব্যবহার ত্বককে পরিষ্কার রাখে এবং নতুন ফুসকুড়ি বা একনি হওয়া প্রতিরোধ করে।

নিম পাতা ত্বকের ইনফেকশন এবং র‍্যাশ বা এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং শরীরের আঘাত বা কাটা-ছেঁড়ার কারণে হওয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।নিম পাতা ত্বককে ময়শ্চারাইজ করতে সাহায্য করে, বিশেষত শুষ্ক ত্বকে। এটি ত্বককে কোমল এবং নরম রাখতে সাহায্য করে।নিম পাতা ত্বকে গ্লো এবং উজ্জ্বলতা আনতে সহায়ক। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ ত্বককে তরুণ এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

নিম পাতা ত্বকের কোষের ক্ষতি কমাতে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ (যেমন ফাইন লাইন বা বলিরেখা) দূর করতে সহায়ক। এটি ত্বকে এক ধরনের টান ধরিয়ে রাখে এবং অল্প বয়সে বুড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণ কমায়।নিম পাতা ত্বকের যেকোনো ধরণের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল এবং ময়লা দূর করে ত্বককে সতেজ রাখে।

কিছু তাজা নিম পাতা গরম পানিতে ফেলে দিন এবং কিছুক্ষণ ফুটান। এরপর ঠাণ্ডা করে একটি তুলো দিয়ে এই পানি ত্বকে লাগান। এটি ত্বককে শুদ্ধ এবং সিক্ত রাখতে সাহায্য করবে।নিম পাতা নারকেল তেলে মিশিয়ে ৭-১০ দিন রেখে দিন। পরে ত্বকে প্রয়োগ করতে পারেন। এটি ত্বকে ইনফেকশন প্রতিরোধ করে এবং ত্বককে সুরক্ষিত রাখে।১ চা চামচ মধু এবং ৫-৬টি পিষে নেওয়া নিম পাতা মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন এবং পরে ধুয়ে ফেলুন।এটি ত্বককে সজীব রাখে, ময়শ্চারাইজ করে এবং একনি কমায়।নিম পাতা স্নান পানিতে ফেলে তার রস ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বককে পরিষ্কার রাখবে এবং শরীরের বিভিন্ন র‍্যাশ বা ইনফেকশন থেকে মুক্তি দেবে।

 নিম পাতার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুন

নিম পাতা অনেক ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যায় উপকারী হতে পারে। নিম পাতার মধ্যে প্রাকৃতিক উপাদানগুলি যেমন অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য অনেক স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে, যা শরীরের সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিম পাতা থেকে পাওয়া প্রধান পুষ্টিগুণের কিছু দিক নিচে তুলে ধরা হলোঃনিম পাতা ভিটামিন C এর একটি ভালো উৎস, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এটি ত্বককে উজ্জ্বল রাখতেও সাহায্য করে এবং সেল টিস্যু মেরামত করতে ভূমিকা রাখে।

এতে ভিটামিন A এর উপস্থিতি চোখের জন্য উপকারী, এবং এটি ত্বক, চুল ও পিগমেন্টেশন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।নিম পাতাতে আয়রন থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরের অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার সমস্যায় উপকারী হতে পারে।নিম পাতা ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। এটি হাড় ও দাঁতের গঠন এবং শক্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।নিম পাতাতে জিঙ্কও রয়েছে, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে উপকারী।

ম্যাগনেসিয়াম নিম পাতাতে উপস্থিত, যা স্নায়ু ব্যবস্থার কাজের জন্য অপরিহার্য। এটি পেশির সঠিক কার্যক্রম এবং শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী বজায় রাখতে সাহায্য করে।নিম পাতা ফলিক অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস, যা গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেল ডিভিশন এবং কোষের পুনর্জন্মের জন্য অপরিহার্য।নিম পাতা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যালস থেকে রক্ষা করে। এটি কোষের ক্ষতি এবং বয়সজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করতে সহায়ক।

এতে প্রোটিনের পরিমাণও রয়েছে, যা শরীরের পেশী গঠন ও কোষের পুনর্নির্মাণে সহায়ক।নিম পাতা ডায়েটরি ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা হজমের প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক।নিম পাতা শরীরের যেকোনো প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি রিউমাটয়েড আर्थ্রাইটিস বা শরীরের যেকোনো প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে সহায়ক হতে পারে।গ্লাইকোসাইডস নিম পাতাতে উপস্থিত, যা শরীরের রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি উপকারী।নিম পাতা নানা ধরনের ফাঙ্গাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকরী। এটি ত্বকে ফাঙ্গাসজনিত ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।

নিম পাতা সংরক্ষণের উপায় 

নিম পাতা ব্যবহার করার জন্য সংরক্ষণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ তাজা নিম পাতা খুব দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং তার কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে নিম পাতার উপকারিতা পেতে পারেন। নিম পাতা সংরক্ষণের বিভিন্ন উপায় নিম্নরূপঃ

  • প্রকৃতির মাধ্যমে শুকানোঃনিম পাতা ভালোভাবে শুকানোর জন্য, একে কিছুদিন সূর্যের আলোতে রাখুন। পাতাগুলি পরিষ্কার ও শুকনো হওয়ার আগে দিনের পর দিন বাইরে রাখুন। এটি পাতাগুলির ভিজা অংশ বের করে এবং পাতা সঞ্চয়যোগ্য হয়ে ওঠে।
  • গরম বাতাসে শুকানোঃ যদি সূর্যের আলোতে শুকানো সম্ভব না হয়, তাহলে আপনি নিম পাতাগুলি রুম টেম্পারেচারে রেখে কিছু দিন শুকাতে পারেন বা শুকানোর জন্য ডিহুমিডিফায়ার বা শুকানোর যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।
  • ফ্রিজে রাখার পদ্ধতিঃতাজা নিম পাতা যদি আপনি কিছুদিন ধরে ব্যবহার করতে চান, তবে সেগুলিকে ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন। প্রথমে পাতাগুলিকে ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং শুকিয়ে নিন। এরপর একে একটি কিচেন টিস্যুতে মুড়িয়ে বা সিল করা ব্যাগে রেখে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।ফ্রিজে রাখা নিম পাতা ৪-৬ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে এবং এইভাবে তা তাজা থাকতে সাহায্য করে।
  • গুঁড়ো করে সংরক্ষণঃ যদি আপনি নিম পাতার গুঁড়ো তৈরি করতে চান, তাহলে তাজা নিম পাতাগুলি পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন এবং এরপর সেগুলিকে একটি মিক্সারে গুঁড়ো করে নিন। গুঁড়ো করা নিম পাতা একটি বাতাসরোধী কন্টেইনারে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করুন। গুঁড়ো নিম পাতা সিল করা প্যাকেটে বা কাচের জারে রাখতে পারেন এবং এটি ৬ মাস বা তার বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা যায়।
  • নিম পাতা পেস্ট তৈরি করে সংরক্ষণঃআপনি নিম পাতা থেকে পেস্টও তৈরি করে সংরক্ষণ করতে পারেন। নিম পাতা ভালোভাবে পিষে পেস্ট তৈরি করে একটি কন্টেইনারে রাখুন এবং ফ্রিজে রাখুন। এটি ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য থাকতে পারে।পেস্ট ব্যবহার করার সময়, এটি অ্যালোভেরা জেল বা মধুর সাথে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
  • নিম পাতা তেলঃনিম পাতা তেল তৈরি করে সংরক্ষণ করা একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। আপনি তাজা নিম পাতা নারকেল তেল বা যেকোনো ভেজিটেবল অয়েলে মিশিয়ে ৭-১০ দিন রেখে তেল তৈরি করতে পারেন। এই তেল শরীরে বা চুলের যত্নে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এটি ৩-৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
  • নিম পাতা টিনে বা কাচের জারে সংরক্ষণঃনিম পাতা শুকিয়ে রেখে একটি বাতাসরোধী কাচের জারে বা টিনে সংরক্ষণ করুন। এটি তাজা রাখা এবং দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী করতে সাহায্য করবে।পাতা শুকানোর পর জারের মধ্যে অতিরিক্ত বাতাস না যাওয়ার জন্য, জার বা টিনের ঢাকনা ভালোভাবে বন্ধ করে রাখুন।

 রোগ নিরাময় নিম পাতার ব্যবহার 

নিম পাতা বহু রোগ নিরাময়ে কার্যকরী। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ এর ব্যবহারের মূল কারণ। নিম পাতা শরীরের নানা ধরনের সমস্যা এবং রোগের প্রতিকার হিসেবে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিম পাতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ রোগ নিরাময় উপায় নিম্নে দেওয়া হলোঃ

  • ডায়াবেটিসঃনিম পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে ডায়াবেটিসের উপশমে সাহায্য করে।৪-৫টি নিম পাতা পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি সারা দিনে ২-৩ বার খেতে পারেন। এটি রক্তের শর্করার পরিমাণ কমাতে সহায়তা করবে।
  • একনি ও ত্বকের ইনফেকশনঃনিম পাতা ত্বকের যে কোনো ধরনের ইনফেকশন বা একনি দূর করতে কার্যকর। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণ একনি কমাতে সহায়ক।নিম পাতা পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি একনি এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
  • হজমের সমস্যাঃনিম পাতা হজম প্রক্রিয়াকে সহায়ক এবং গ্যাস্ট্রাইটিস বা পেটের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।৪-৫টি নিম পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি খেলে হজমের সমস্যা কমে যাবে। এটি গ্যাস, অম্বল, এবং পেটের অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
  • সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টঃনিম পাতা সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় সহায়ক। এটি গলা এবং শ্বাসনালীর প্রদাহ কমায় এবং শরীরে শক্তি যোগায়।কিছু তাজা নিম পাতা ও হালকা মধু মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্ট ও কাশি কমে যেতে পারে।
  • মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনঃনিম পাতা মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের উপশমেও সহায়ক।নিম পাতা গুঁড়ো করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে মাথাব্যথা কমে যেতে পারে

 শেষ কথাঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম গাছ একটি পরিবেশবান্ধব ও ওষধি গাছ।নিম গাছ সম্পর্কে আমদের হয়তো সকেলের জানা নেই নিম গাছ আমাদের অনেক কাজে লাগে,নিম গাছের ডাল পালা ইত্যাদি সবকিছু কাজে লাগে।নিম গাছ আমাদের অনেক ধরেনের রোগের ওষধি গাছ হিসাবে কাজে লাগে।নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে উপরের দেওয়া আর্টিকেলটি পরে নিন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জরিপ ৩৬৫ জুড়ে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন ।প্রতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়

comment url